২ মে, ২০২৪ খ্রী: রোজ বৃহস্পতিবার ধোবাউড়া সরকারী টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহে কারিগরি ও বৃত্তি মূলক শিক্ষা সপ্তাহ, ২০২৪ উপলক্ষ্যে অত্র প্রতিষ্ঠানের মিলনায়তনে “স্মার্ট বাংলাদেশ বিনর্মাণে কারিগরি শিক্ষার ভূমিকা” শীর্ষক আলোচনা ও অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব নিশাত শারমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: গোলাম আজম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ, জনাব মো: জহির উদ্দিন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ধোবাউড়ার, ময়মনসিংহ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ, এলাকার সম্মানিত জ্ঞানী-গুণীজনসহ অত্র স্কুলের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব প্রকৌ: মো: আনিছুর রহমান ভূঞা, অধ্যক্ষ, ধোবাউড়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ।
একজন মেয়ে সন্তানকে পিতামাতারা যেন বোঝা মনে না করেন। কারিগরি শিক্ষার মাধ্যমেই একটি মেয়ে সন্তানকে একটি ছেলে সন্তানের সমতুল্য হতে পারে বলে মন্তব্য করেন জনাব নিশাত শারমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ। তিনি আরো বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড। একজন শিক্ষক হলেন কারিগর। তাই একজন শিক্ষক সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু বর্তমান সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে শিক্ষকগণ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবেই ছাত্রছাত্রীদের দ্বারা লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হচ্ছেন যা খুবই লজ্জাজনক এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার জন্য শুধুমাত্র কারিগরি জ্ঞান কিংবা দক্ষতাই যথেষ্ট না। কিন্তু ইহার সঠিক ব্যবহার জানতে হবে। আজকের শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যত। একটি ভুল সিদ্ধান্ত নেশার জগত একজনের জীবনকে শেষ করে দিতে পারে। মাদক থেকে নিজেদের মুক্ত থাকার জন্যও তিনি ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সকলের অংশগ্রহণ উদ্বুদ্ধ করেন।
উক্ত আলোচনা সভায় আরো অনেকেই বক্তব্য রাখেন। একজন ছাত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ধোবাউড়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ হতে তারা হাতে-কলমে কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। এই দক্ষ জনশক্তিই হবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার চাবি কাঠি। উঠবে বলে । একজন শিক্ষক তার বক্তব্যে স্মার্টবাংলাদেশ বিষয়ে বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা কি, কেন এবং কিভাবে আমরা এই জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করতে পারি সে বিষয়ের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মাত্র ১৫% জনগণের মধ্যে কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা বিদ্যমান যা দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য। ফলে আমাদের বাহিরের দেশের প্রকৌশলীদের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা না থাকার কারণে অনেক শিক্ষিত জনগণও বেকারত্বের শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করেন। এজন্যই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কারিগরি শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। সন্তানদেরকে কারিগরি শিক্ষায় উৎসাহিত করতে অভিভাবকদের তিনি উদ্বুদ্ধ করেন।
অনেকেরই ধারণা করেন ঝড়ে-পড়া কিংবা দুর্বল ছাত্রছাত্রীদের জন্যই কারিগরি শিক্ষা। এরূপ ধারণা থেকে আমাদের বেড়েই হয়ে আসা জরুরি আবশ্যক। কারিগরি শিক্ষা ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া অসম্ভব। বর্তমান সরকারের একটাই লক্ষ্য দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি দেশের সম্পদ, দক্ষতা নিজের সম্পদ যা কেউ হরণ করতে পারেনা। দক্ষ জনশক্তিই নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
অন্যদিকে যারা জেনারেল বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করছে তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে পিছিয়ে পড়বে।
জনাব প্রকৌ: মো: আনিছুর রহমান ভূঞা, অধ্যক্ষ, ধোবাউড়া সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, ধোবাউড়া, ময়মনসিংহ বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে দক্ষ কারিগরি নাগরিক গড়ে তোলার ও কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রতি উপজেলায় একটি করে কারিগরি বা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ধোবাউড়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড ২০২২ সালে যাত্রা শুরু করে। বর্তমান সরকারের স্বপ্ন যেন সকলেই কারিগরি শিক্ষার সুযোগ পায়। কেউ যেন এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারিগরি শিক্ষা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে আবশ্যক। অভিভাবকদের তাদের সন্তানদের প্রতি আরো বেশী যত্নবান ও মনিটরিং করা আবশ্যক বলেও মন্তব্য করেন। সকল শিক্ষার সাথে মূল্যবোধ এবং নৈতিকতা শিক্ষার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
আলোচনা শেষে অভিভাবকদের জন্য বিভিন্ন ল্যাব পরিদর্শন করার আয়োজন করা হয়। প্রতিষ্ঠানের ল্যাব গুলো অত্যাধুনিক উপকরণ ও ব্যবহারিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সুসজ্জিত। অত্র প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের হাতে-কলমে শিক্ষার অগাধ সুযোগ রয়েছে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছেন বলেই সোনার বাংলাদেশ আজকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। জাতির পিতার সেই স্বপ্নকে বাস্তব করে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ঘোষণা দেন এবং ২০২১ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যপূরণ করেন। এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। স্মার্ট শিক্ষার মাধ্যমেই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া সম্ভব