ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

জয় বাংলার ডিজিটাল বাংলাদেশ

-মো: আছাদুজ্জামান

আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের যতসব অর্জন রয়েছে; তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা । ১৯৭১ সালে আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাঝ দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। সব মানুষের মুখে মুখে যে শ্লোগানটি সেদিন আকাশ বাতাসকে প্রকম্পিত করেছিল তা হলো জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। এই শ্লোগানের অন্তর্নিহিত শক্তি ছিল অজেয়-অবিনাশী। জয় বাংলা শ্লোগানের  ভেতর দিয়েই আজ ডিজিটাল বাংলা; বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে ব্রতী রয়েছেন।

বাঙালী  জাতির উন্নত জীবন ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। সংগত কারণেই রাষ্ট্রীয় বিধি ব্যবস্থায় Public Service ধারণাটি একেবারে মূর্ত হয়ে উঠেছে।

ইংরেজি Public Service শব্দটির বাংলা প্রতিশব্দ হলো জনসেবা। প্রাচীন যতসব গুরুত্বপূর্ণ Conception রয়েছে   তার অন্যতম হলো Public Service । ঠিক কবে কোথায়, কোন প্রেক্ষিতে, কোন সমাজে এটির প্রবর্তন ঘটেছিল তা জানা না গেলেও এটা মোটামুটি নিশ্চিত শিক্ষার উন্নয়নের পাশাপাশি সভ্যতার ক্রম বিকাশের সূত্র ধরেই ইউরোপীয় অথবা এশীয় কোন  প্রাচীন সভ্য দেশে এর উন্মেষ ঘটে। কারণ পৃথিবীর বেশীরভাগ আদি এবং বিখ্যাত প্রাচীন সভ্যতাগুলোর অভ্যুদয়  এশিয়া ও ইউরোপেই ঘটেছিল।  এক্ষেত্রে এশিয়া এবং ইউরোপের আদি সভ্যতাগুলো যেমন গ্রীক সভ্যতা, স্পেনিশ সভ্যতা, ইটালীয় সভ্যতা ,ইংরেজ সভ্যতা, মেসোপটেমিয়া সভ্যতা, মিশরীয় সভ্যতা, চীন সভ্যতা, সিন্ধু সভ্যতা, ভারতীয় সভ্যতা ইত্যাদি আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। এমনকি বাংলাদেশের কুমিল্লার ময়নামতি সভ্যতা অথবা উত্তর বাংলার মহাস্থানগড় সভ্যতাও প্রাচীন সভ্যতাগুলোর নিদর্শনের মধ্যে পড়ে। এসব সভ্যতায় গ্রামীণ সমাজের পাশাপাশি নগর সমাজেরও বিকাশ ঘটে বলে জানা যায়।

গ্রীক সভ্যতা ঘাটলে দেখা যায় সেখানে যীশু খ্রীষ্টের জন্মেরও ৪শ বছর আগে কালজয়ী নাট্যকার সফোক্লিস ইডিপাস নাটক লেখেন, মহাকবি হোমার লেখেন ইলিয়াড এবং ওডেসি মহাকাব্য। এসব সৃষ্টি আজো সব সভ্যতার বিস্ময়। চীনা সভ্যতা বা কনফুসিয়াস সভ্যতা ঘাটলে দেখা যায় তারা জনসেবায় নথি ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটান। আমরা যদি আমাদের শিকড়ের সন্ধান করি তাহলে দেখা যাবে বাংলাদেশের রয়েছে এক শক্তিশালী ও ঐশ্বর্যময় সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। আমাদের পূর্বসূরী চর্যাপদকর্তারা যেখানে খ্রীষ্টিয় ৭ম শতকে চর্যাপদ রচনা করেন, সেখানে ইংরেজদের ইংরেজি সাহিত্যের জনক জিওফ্রে চসার তাঁর ক্যান্টার বাড়ী টেলস লেখেন খ্রীষ্টিয় ১০ম শতকে। সাহিত্য ঐতিহ্যে ইংরেজদের চেয়ে আমরাই এগিয়ে। আমাদের পূর্বসূরী লুইপা, কাহুপারা লিখেছিলেন,

“টালতো ঘর মোর নাহি পরবেশি

হাড়িত ভাত নাহি নিতি আবেশি”।

টিলার উপর আমার ঘর, আমার প্রতিবেশি নাই। আমি ক্ষুধার্ত অথচ আমার হাড়িতে ভাত নেই। শুরু সেখানেই। একটা দীর্ঘ পথপরিক্রমায় আমরা আজ এখানে দাঁড়িয়ে। বহু জল বঙ্গপোসাগরে গড়িয়েছে। বাংলার সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১২০১ সালের দিকে ইখতিয়ারউদ্দিন- মোহাম্মদ-বিন বখতিয়ার খলজীর বাংলা জয়ের মাধ্যমে এদেশে মুসলিম শাসনের সূচনা। এরপর এলো পর্তুগীজরা, ওলন্দাজরা এলো, দিনেমাররা এলো, ফরাসীরা এলো, সর্বশেষ এলো ইংরেজরা – শুধু এলোইনা প্রায় ২০০ বছর একটানা ইংরেজরা   বাংলা শাসন করে গেল। ইতোমধ্যে ইউরোপীয় রেনেসাঁ সারা বিশ্বে হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। জেমস ওয়ার্টের বাস্পীয় ইঞ্জিন  আবিষ্কার সভ্যতার উন্নয়নে নতুন দিগন্ত খুলে দিলো। মাইকেল ফ্যারাডের বিদ্যুৎ আবিষ্কার, লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির দর্শন, চিত্রকলা শেক্সপিয়ারের নাটক ইউরোপসহ পুরো বিশ্বকে নতুন করে নাড়া দিলো। ইউরোপীয় বেনিয়াদের ক্রম আগমনে সর্বশেষ আমরা ইংরেজদের পাই। ইংরেজ শাসনের একটা বড় দিক ছিল তারা তাদের শাসিত অঞ্চলের জন মানুষের জন্য নিজেদের ধ্যানজ্ঞানে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করতো। এরই ফলে তারা কলকাতায় সংস্কৃত কলেজ, ফোর্টউইলিয়াম কলেজ, কলকাতা মাদ্রাসা প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করেন। ১৭৫৭ সালে পলাশীর  বিপর্যয়ের পর ইংরেজরা মুসলিম জমিদার উচ্ছেদ করে তাদের  অনুগত বিশ্বস্ত হিন্দুদেরকে  জমিদার নিয়োগ দেন। হিন্দু জমিদারগণও শিক্ষা বিস্তারের পৃষ্টপোষকতা করেন। পাশাপাশি খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের জন্য বাংলা ভাষা চর্চায় তারা শ্রীরামপুর  মিশনে ছাঁপাখানা স্থাপন করেন। এটা বাংলা ভাষাও সাহিত্য চর্চায় একটা নতুন যুগের সূচনা করে। এরপর নানা ঘটনা – দুর্ঘটনায় ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ, ১৯০৬ সালে মুসলিম জমিদার স্যার সলিমুল্যার মুসলিমলীগ গঠন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বঙ্গভঙ্গ রদকল্পে রাখিবন্ধন আন্দোলন, ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ, ১৯১৪ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯১৭ সালে ভলশেভিক বিপ্লব, ১৯২০ সালে মহাত্মাগান্ধীর নেতৃত্বে অহিংস আন্দোলনের সূচনা সর্বোপরি ১৯২১ সালে পূর্ববাংলায় ‘‘ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়” প্রতিষ্ঠা ছিল সবচেয়ে বড় আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা। বলা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক সৃষ্ট বুদ্ধিজীবি শ্রেণী পরবর্তীতে বাংলার সব কটি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।

১৯৩৯ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধের শুরু এবং ১৯৪৫ সালে এর সমাপ্তি। ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভাগ এবং পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন কাঠামোতে প্রতিস্থাপন ছিল আমাদের জীবনের আরেকটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ৪৭ এর দেশ বিভাগে প্রচুর সংখ্যক হিন্দু জনতা ভারতে চলে যান। ৬৫ এর ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে আরো অনেকে চলে যান। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধেও অনেকে চলে গেছেন। এটি বাংলাদেশের সামাজিক জীবনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে।

যদি ৪৭-৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত আমরা আমাদের রাজনৈতিক পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করি তাহলে প্রথমেই আমাদের সামনে আসবে পাকিস্তানী শাসকগোষ্টির শোষণ, জুলুম, ও নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। অবশ্যি ৫২ এর ভাষা আন্দোলন আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন শক্তিশালী করার পাশাপাশি রাজনৈতিক আন্দোলনেও যুক্ত করে নতুন চেতনা, নতুন মাত্রা। স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয় ভাষা আন্দোলনের অমর অর্জনেই।

৪৭ এর পর আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামে শেরে বাংলা ফজলুল হকের মতো, হোসেন শহীদ সোহরাদ্দীর মতো, মওলানা আব্দুল হামিদখান ভাসানীর মতো তারকা রাজনীতিবিদ পেলেও আমাদের চির কাঙ্খিত স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা পেতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত অপেক্ষা

করতে হয়। চর্যাকাল থেকে ৭১ পর্যন্ত নিরন্তর এই অপেক্ষা যেন একজন বঙ্গবন্ধুর জন্যই ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে কাঙ্খিত বিজয় অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত, শোষণমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ে তোলা। বিজয় অর্জনের স্বল্প সময়ের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু উপহার দিয়েছিলেন একটা  অসাধারণ সংবিধান। এতেই মানুষের মৌলিক অধিকারসহ জনমানুষের সবধরনের সেবাকার্যক্রম বিধৃত হয়েছিল।

‘জনসেবা’ বিষয়টির স্বরূপ আলোচনায় আমি বাংলাদেশের পাশাপাশি আন্তুর্জাতিক কিছু বিষয়, কিছু দৃষ্টান্ত উপস্থাপনে ব্রতী হবো। প্রথমে আমি শুরু করবো আমাদের পবিত্র সংবিধানের  একটি উদ্ধৃতি দিয়ে। সকল সময়ে জনগনের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য” (অনুচ্ছেদ ২১.২) জনসেবা, অধিকার, উন্নয়ন এই  কনসেপ্ট গুলো মানব সভ্যতার আদি থেকেই ছিল। বিবর্তনের ক্রমধারায় এর স্বরূপ পাল্টেছে। পদ্ধতি পাল্টেছে  কিন্তু ধরণ অনেকটা একইরূপ। আদিযুগে মানুষ যখন গুহায় বাস করতো তখন ভয়ংকর জীবজন্তুর হাত থেকে বাঁচার জন্য এবং একইসাথে  পশু শিকারের জন্য মানুষ দলবদ্ধ হয়ে বাস করতো। আজো বিশ্বের  কোনো দেশই একা একা চলতে পারেনা। সেই গুহাবাস থেকে আজ বিশ্বগ্রামের ধারণা সার্বজনীন রূপ পরিগ্রহ করেছে। মানুষ নিজের প্রয়োজনেই পশুপালন, মৎস্যপালন এবং কৃষিকাজে নিযুক্ত হয়েছে। নিজেদের ভোগবিলাস-আনন্দ ফূর্তির জন্য মানুষ নিজের চারপাশকে উন্নত করার অনবরত চেষ্টা  করেছে। আর এতে করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সমৃদ্ধ হয়েছে।

আধুনিক সভ্যতার ক্রম বিকাশ বিশ্লেষনে দেখা যায় মানুষ নিজেদের  উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ব্রতী হয়েছে। এতে করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ সাধিত হয়েছে। গত শতাব্দীতে অবশ্যি খুব স্বল্প সময়ের ব্যবধানে পর পর ২টি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। ধ্বংসের দামামা বেজে ওঠে। এসব যুদ্ধে ব্যাপক মারণাস্ত্রের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় । এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান নামক দেশটি ২টি আনবিক বোমার শিকার হয়। যা আজো মানব সভ্যতাকে ধিক্কার জানায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা  ও সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে দীর্ঘ সময় ধরে শীতল যুদ্ধ চলাকালে মার্কসবাদ তথা কমিউনিজমের আদর্শ প্রচার ও প্রসার যা  সোভিয়েত ইউয়নের নেতৃত্ব সারা বিশ্বে চলতে থাকে। একইসাথে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ধনতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রচার- প্রসার সারা বিশ্বে চলতে থাকে।  এই দুটি শক্তিই মহাকাশ গবেষনায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে। চন্দ্রবিজয় ও মহাকাশ বিজয়ে তাদের সাফল্যও আসে এবং বিশ্বব্যাপী সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার পাশাপাশি ব্যাপক ভাবে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পায়।  এ উপমহাদেশের দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান দুই ব্লকে থেকে নিজেরাই পারমানবিক শক্তির অধিকারী হয়।

সেবা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টা যদি আমরা লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাবে ব্যক্তি, গোষ্টি, সরকার, বিভিন্ন সংস্থা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে। ব্যক্তির সেবা কার্যক্রম যে রকম হবে গোষ্টির সেবা কার্যক্রম কিন্তু সে রকম হবেনা। আবার রাষ্ট্র বা সরকার যে পদ্ধতিতে সেবা দেয় সংস্থা বা ব্যক্তি কিন্তু সেই পদ্ধতিতে সেবা দেয়না। অবশ্যই রাষ্ট্রের সেবা কার্যত্রমে অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপ্রধান তার ব্যক্তিগত বিশেষ কারিশমা প্রদর্শন করে থাকেন। উদাহরন হিসেবে মালয়েশিয়ার জনসেবায় রাষ্ট্রপতি মাহাথির মোহাম্মদের অবদানের বিষয়টা, সিঙ্গাপুরের উন্নয়নে তাদের নেতা মি: ‘লি’ এর অবদান, বাংলাদেশের উন্নয়নে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদানকে আমরা উল্লেখ করতে পারি।

এবার আমি ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর অভাবনীয় উন্নয়নসমৃদ্ধ কয়েকটি দেশের সেবা ও উন্নয়নের ধরণ নিয়ে কথা বলবো। প্রথমেই আসা যাক জাপানের বিষয়ে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের অব্যাবহিত পরেই যিনি জাপানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন,  তিনি তার আবেগ ও জ্বালাময়ী বক্তৃতার মাধ্যমে গোটা জাপানীদের একত্র করেছিলেন। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন আজ সকালে পূর্ব দিগন্তে যে লাল সূর্য উদিত হয়েছে তা একমাত্র জাপানীদের জন্যই। আজ আমাদের, আগামীকাল আমাদেও, পরশুটাও আমাদের। খুব স্বল্প সময়ে জাপানের অভাবনীয় অর্থনৈতিক সাফল্য কার অজানা? বাকী সবই ইতিহাস। জাপানীরা তাদের সেবা ও উন্নয়ন কর্মে ‘কাইজান’ অবিধা যুক্ত করেছেন। কাইজান অর্থ পরিবর্তন। আজ বাংলাদেশের সেবাখাতে এবং উন্নয়ন খাতে ‘কাইজান’ পদ্ধতি প্রবর্তনের চেষ্টা চলছে। এখানে বলা ভালো আজও ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা জাপান পুরোপুরি কাঁটাতে পারেনি।  তাদের কোন সামরিক ব্যয় নেই। ব্যয় যা কিছু গোটা মানব সভ্যতার কল্যাণে। আজো জাপানে মার্কিন সৈন্য রয়ে গেছে।

এরপর আসি সিঙ্গাপুরের অভাবনীয় উন্নয়ন বিষয়ে। ঝিনাইদহ জেলার সমান আয়তনের এ দেশটি এক সময় মালয়েশিয়ার উপনিবেশ ছিল। ৭০ বা ৮০ এর দশকে মালয়েশিয়া তাদেরকে বোঝা ভেবে ত্যাগ করে চলে গিয়েছিল। তাদের নেতা মি: লি: অঝোরে শুধু ঘন্টা দুয়েক কেঁদেছিলেন। অত:পর নিজে ঝাঁটা হাতে নিলেন। বাকী সিঙ্গাপুরের লোকজনের হাতে ঝাঁটা তুলে দিলেন। সুমুদ্র উপকুলীয় সিঙ্গাপুর পরিস্কার হলো। তারা শুধু দেশকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। আইন-শৃঙ্খলা ঠিক রেখেছেন। দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রিয় মূল্যবোধ ঠিক রেখেছেন। বাকি ইতিহাস সবার জানা । শুধু পর্যটন খাতের আয় তাদের  মোট আয়ের ৭০%। আল্লাহ আমাদের পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দিয়েছেন। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন দিয়েছেন্, দিয়েছেন বৈচিত্রপূর্ণ সং¯কৃতি। কিন্তু তা আমরা কতটুকু কাজে লাগাতে পারছি? সেটাই প্রশ্ন। একইভাবে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, দক্ষিণকোরিয়ার ইতিহাসও আমাদের জানা। একটি উন্নত মালয়েশিয়া একজন মাহাথিরের। এটি একটি কিংবন্তীর ইতিহাস । মি: মাহাথির আই এম এফ ও বিশ্ব ব্যাংকের ব্যবস্থাপত্রের বাইরে থেকেই দেশটিকে একেবারে মাটি থেকে আকাশে তুলেছিলেন।

১৯১৭ সালে ভলশেভিক বিপ্লবের পর সারা বিশ্বে কম্যুউনিজমের তকমা গ্রহনের জন্য রীতিমত হুড়োহুড়ি শুরু হয়। বস্তুত সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী কমিউনিজম ব্লক বা বাম ব্লক এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ধণতান্ত্রিক ব্লক বা ডান ব্লক সৃষ্টি হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগেই ব্লক দুটির মধ্যে তীব্র অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্ধিতা শুরু হয়। এটা আরো তীব্র আকার ধারণ করে বিশ্বযুদ্ধ থামার পর। এ  সময় পক্ষদ্বয়ের নেতৃত্বে সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বেশকিছু জোট এবং প্রতিষ্ঠান আত্মপ্রকাশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিম ইউরোপের ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর সমন্বয়ে সামরিক জোট ঘঅঞঙ এবং অর্থনৈতিক জোট এ-৭ সৃষ্টি হয়। বিশ্ব অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওঋগ ও বিশ্ব ব্যাংকের কার্যক্রমও তখন শুরু হয়। এদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সামরিক জোট ডঅজঝঙড সৃষ্টি হয়। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয় তা দীর্ঘকাল ব্যাপী  চলমান থাকে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্লান চালু করে তার ধণতান্ত্রিক মিত্র দেশগুলোর অর্থনীতিকে ব্যাপক পৃষ্টপোষকতা প্রদান করে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিম ইউরোপের ধনবাদী দেশগুলো আস্তে আস্তে যুদ্ধের ক্ষত সেরে শক্তিশালী আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। এটা সত্য বাংলাদেশের অর্থনীতি এ ধরণের পৃষ্টপোষকতা কখনোই পায়নি।

এবার চলে আসবো বাংলাদেশের জনসেবা এবং উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনায়।  আগেই বলেছি আমাদের স্বাধীনতার মূল স্বপ্ন ছিল ক্ষুধা, দারিদ্র ও শোষণমুক্ত অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্টা। স্বাধীনতা লাভের অব্যাবহিত পরেই এবং নব্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধস্ত বাংলাদেশের পুণর্গঠনে ব্যাপক কর্মসূচী গৃহীত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়। সোভিয়েত ধাঁচের পঞ্চ বার্ষিকী অর্থনৈতিক কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। আর্ন্তুজাতিক অঙ্গনে খুব স্বল্প সময়ে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসেন। তিনি ‘‘ঋৎরবহফংযরঢ় ঃড় ধষষ সধষরপব ঃড় হড়হব”  এই মন্ত্রকে সামনে নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি চমৎকার ভাবে ঢেলে সাজান। ভারতসহ প্রতিবেশী দেশ মায়ানমারের সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি করেন। বাংলাদেশ যখন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আগাচ্ছিলো ঠিক এমনি এক সময়ে দেশী আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী গোষ্ঠি একত্র হয়ে জাতির জনককে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশের উন্নয়নকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরে।

এর পর একটা দীর্ঘ সময় সামরিক শাসকগণের নেতৃত্বে বাংলাদেশ পরিচালিত হতে থাকে। এ সময় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিকাশ বাঁধাগ্রস্থ হয়। জাতীয় মূল্যবোধ ভুলুন্ঠিত হয়। সর্বোপরি দেশ শাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা অনুপস্থিত থাকায় বাংলাদেশ তার কাঙ্খিত উন্নয়ন অর্জনে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ‘‘ডিজিটাল বাংলাদেশ”কে সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। একই সাথে এতে ‘‘ঠরংংরড়হ ২০২১” যুক্ত করে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ যখন তার স্বাধীনতা যুদ্ধের  সূবর্ণ জয়ন্তী পালন করবে ঠিক তখন শিক্ষার হার কোথায় যাবে, মাথাপিছু আয় কত ডলার হবে, মাথাপিছু ক্যালরী গ্রহণের হার কী হবে, ইত্যকার নানা বিষয় অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নির্ধারিত হয়। বলা যায় এ ধরনের কোনো টার্গেট নির্ধারন সরকার পরিচালনায় এর পূর্বে আর কখনো  করা হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়টি নিয়ে অনেকেই প্রথম প্রথম হাসি ঠাট্টা করতো। আজ জাতি এটি বাস্তবায়নের শেষপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে, এখন আর কেউ ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে কোন হাস্যরস করেন না।

নানা ধরণের  নাগরিক সেবা দুর্ণীতিমুক্ত ও সহজ করার জন্য ঊ- প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ঘরে বসেই নানা ধরণের নাগরিক সেবা প্রাপ্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলছে। এই  ধরেন ঘরে বসে ব্যাংকিং সেবা, বিদ্যুতের বিল পরিশোধ, জমির কর খাজনা পরিশোধ, নামপত্তন করা ,ঘরে বসে বাস- ট্রেন বা বিমানের টিকিট ক্রয় ইত্যকার নানা সেবা মানুষের জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে।  ই- নথি ব্যবস্থার প্রবর্তন, ই- মোবাইলকোর্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন, অফিস ব্যবস্থাপনায়এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে।  সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে। দিন বদলের এতসব চমক বাংলাদেশের জনগনকে সত্যিকার অর্থেই একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায়। বলা যেতে পারে সবধরণের নাগরিক সেবায় ডিজিটালাইজেশন এক ভীন্ন বাংলাদেশ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে, যা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আজ বাংলাদেশের ওয়েবপোর্টাল বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েবপোর্টালগুলোর একটি। এটা নাগরিক সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার এক নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করেছে। আমি এ পর্যায়ে জনসেবা ও উন্নয়নে বাংলাদেশের সাফল্য বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো।

আজ বাংলাদেশ সারা বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশের সক্ষমতা সারা বিশ্বে সর্বদাই প্রশংসিত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিশ্ব অর্থনীতিতে ইমার্জিং টাইগার হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি দপ্তর বা সংস্থা তাদের সেবাদানমূলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে ইনোভেটিব আইডিয়ার সফল প্রয়োগ ঘটিয়ে নাগরিক সেবাকে সহজও দুর্নীতিমুক্তকরনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করছে। এ ক্ষেত্রে সেবাগ্রহনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ঞঠঈ অর্থাৎ , ঞ-সময়, ঠরংরঃ বা দপ্তরে ঘোরাঘুরি হ্রাস এবং যৌক্তিক দাম বা ঈড়ংঃ প্রদান করে ব্যক্তি তার সেবাকে জবাবদিহিতার মাধ্যমে গ্রহণ করবেন।

একসময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অবজ্ঞা করতো আজ তারাই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রশংসা করে। পদ্মাসেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিলে বাংলাদেশ তার নিজস্ব অর্থে সেটি নির্মাণ করছে। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী এটা করে দেখিয়ে দিয়ে সারা বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেছেন। তিনি বাংলাদেশের সম্ভবনা নতুন আঙ্গিকে সারা বিশ্বে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। আজ আর প্যারিসে দাতাদের বাংলাদেশ সংক্রান্ত কনসোটিয়াম সভা করতে হয়না। ভিক্ষার থালা হাতে কোট টাই পড়ে আমাদের অর্থমন্ত্রীকে সেখানে আর ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে সাহায্য প্রার্থনা করতে দেখা যায়না।

বাংলাদেশের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ঈদ, পূজাসহ প্রতিটি উৎসবে মানুষ প্রচুর ক্রয় বিক্রয় করে থাকে। মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশ নজীর সৃষ্টি করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের  ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে, দুর্নীতি দমন তথা পরিশুদ্ধ

সমাজ গঠনে বাংলাদেশ প্রশংসা অর্জন করেছে। এটা অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ যে, বাংলাদেশ গত ২০১৮ সালে মহাকাশে ‘‘বঙ্গবন্ধু” স্যাটালাইট উৎক্ষেপন করেছে  যা বাংলাদেশের সামনে সম্ভবনার এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা হতে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত নারীশিক্ষাকে অবৈতনিক করা হয়েছে,  সরকার সামগ্রিক শিক্ষার হারকে বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবনতা বিশ্লেষণে দেখা যায় কৃষির পাশাপাশি গার্মেন্টস, সেবা খাত এবং বিদেশি রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। গোটা বিশ্বে বাংলাদেশী তরুণ তরুনীরা ছড়িয়ে পড়ছে। ঘরকুনো বাঙালীর এই বদনাম থেকে আমরা আজ বেরিয়ে যাবার চেষ্টা করছি। এই সপ্তাহ দুয়েক আগে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ২০০০ বাঙালী চোরা পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে তুরস্কে আটকা পড়েছে। এই ঘটনা আমাদের নতুন করে সাহসী করে তোলে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সমুদ্র জয় করেছে। জাতীয় অর্থনীতির উন্নয়নে সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকার ডেল্টা প্ল্যান গ্রহণ করেছে। আজ বাংলাদেশর জনসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ছুঁই ছুঁই। ব্যাপক এ জনসংখ্যা একদিকে যেমন আশীর্বাদ অপরদিকে তেমনি অভিশাপ। বাংলাদেশের উচ্চ জন্মহারের লাগাম টেনে ধরা দরকার। অর্থনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশ আজ নিজেই একটা বড় বাজার। এই সম্ভবনাকে কাজে লাগিয়ে বেকার যুবক যুবতীদের জন্য  ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আভ্যন্তরীন বিনিয়োগ বাড়ানো প্রয়োজন। অধিক জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিনত করতে হবে।

এ পর্যায়ে বাংলাদেশের জনসেবা ও উন্নয়ন এবং প্রাসঙ্গিক চ্যালেঞ্জ সমূহের প্রতি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবো। জঙ্গীবাদ আজ শুধু বাংলাদেশেরই সমস্যা নয়। এটা একটা বৈশ্বিক সংকট। ৯০ এর দশকে সমাজতন্ত্রের পতনের পর এবং শীতল যুদ্ধের অবসানের পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা চালু হয়।

পৃথিবীর নানা দেশে নতুন অস্থিরতা জন্ম নেয়। এ প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান গবেষক অধ্যাপক স্যামুয়েল হান্টিংটনের ‘‘ঈষধংয ড়ভ ঈরারষরুধঃরড়হ” অত্যন্ত প্রনিধানযোগ্য। সভ্যতার সংকটে তিনি মুসলিম জাতি, হিন্দু জাতি, বৌদ্ধ জাতি, খ্রিষ্টান জাতি, ইহুদি জাতিসহ অন্যান্য ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠিগুলোর মধ্যে দ্বন্ধসংঘাতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ক্ষেত্র আগে থেকেই প্রস্তুত করা ছিল। ¯œায়ুযুদ্ধ চলাকালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্তানে নজিবুল্লাকে ক্ষমতায় বসায়; তখন যুক্তরাষ্ট্র নজিবুল্লার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের মোল্লাদের  এবং আফগানিস্তানের তালেবানদের ব্যবহার করে। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনকে দিয়ে ইরান আক্রমন করায়। পরে জীবানু ও পারমানবিক অস্ত্রের ধুঁয়ো তুলে সাদ্দামকে খুন করে। যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত আরব বসন্তের নামে মিশর, লিবিয়া এবং সিরিয়াকে ধংস করেছে। সর্বশেষ তারা কাতারকে কেন্দ্র করে সৌদিআরবসহ মধ্য প্রাচ্যের ৫/৭টি দেশকে অস্থিরতার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।  লক্ষ্য তেল ও অস্ত্র ব্যবসা। ইরাক ইতোমধ্যে শ্মশানে পরিনত হয়েছে। আর অন্যদিকে  পাকিস্তানী মোল্যা-তালেবানের পাশাপাশি আইএসের উত্থান আজ সারা বিশ্বে মুসলমানদের জঙ্গী জাতি হিসেবে নতুন পরিচিতি দিচ্ছে। আর এর শিকার হচ্ছে বিশ্বব্যাপী সবদেশের মুসলমান সম্প্রদায়। সম্প্রতি প্যারিস ও লন্ডনে সন্ত্রাসী হামলা বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কোণঠাসা করে দিয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও। রেমিট্যান্সের জন্য এটা একটা বড় হুমকি। বাংলাদেশের আভ্যন্তরীন জঙ্গী তৎপরতা আন্তুর্জাতিক বিশ্বে একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে আমাদের ভাবমূর্তি অনুজ্জল করছে। শিক্ষার নি¤œহার, ধর্মীয় কুসংস্কার  উগ্রপন্থাকে উৎসাহিত করছে।

শিক্ষা উন্নয়নের জন্য আমাদের জোরালো কর্মসূচী গ্রহণ করা  প্রয়োজন। শিক্ষার কাজটি যথাযথভাবে করা গেলে আলটিমেটলি অন্য অনেক কাজ করা সহজ হয়ে যাবে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির চ্যালেজ্ঞসমূহ অতিক্রম করা প্রয়োজন। যুবক যুবতীদের মধ্য হতে হতাশা দুর করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সামনে দিয়ে একটি সুন্দর সময় চলে যাচ্ছে। অগনিত বেকার যুবক  যুবতীকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ উন্নয়নের স্বর্ণ শিখর স্পর্শ করতে পারবে। সরকার ২০৪১ সালে যে উন্নত বাংলাদেশের টার্গেট নির্ধারণ করেছে, আমার বিশ্বাস সেটি অর্জিত হবেই হবে ইনশাল্ল্হা।

গাঁ গ্রামে মানুষ হয়েছি। ছোটোকালে শুনতাম গ্রামে কোনো লোকের হাতে টাকার সমাগম বাড়লে সে বেশী বেশী বিবি ঘরে আনতো অর্থাৎ টাকা বাড়ার সাথে সাথে কিছু অপরাধও বৃদ্ধি পায়। এটার অবদমন প্রয়োজন। বাড়তি টাকা বিদেশে পাচার না করে দেশে বিনিয়োগ করলে ভালো হয়। সুইচ ব্যাংকে টাকা জমানো খারাপ প্রবনতা। লন্ডন আমেরিকায় বাড়ী তৈরী করা খারাপ কাজ। দেশে বেশী বেশী বিনিয়োগ করে বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে সেটা ভালো হয়। ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় মূল্যবোধকে সমুন্নত রাখা একান্ত প্রয়োজন। আমরা যেন বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করতে পারি। সবার মধ্যে গৌরবসহ যেন বলতে পারি আমি বাঙালী।  মানবতাবোধকে জাগ্রত করা প্রয়োজন।

উন্নত আইনশৃংখলা উন্নয়নের পূর্বশর্ত-এটা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ প্রসঙ্গে একজন ভারতীয় দার্শনিকের উদ্ধৃতি খুবই প্রাসঙ্গিক। তিনি সভ্য দেশের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন, যে দেশে মধ্যরাতে একজন অষ্টাদশী যুবতী একা নির্বিঘেœ রাস্তা পার হতে পারে সে দেশই সভ্য দেশ।

উন্নত আইনশৃংখলা নিশ্চিত করার জন্য যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করা প্রয়োজন। সর্বগ্রাসী পর্ণগ্রাফি যুব চরিত্র রক্ষার্থে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই সমুন্নত রাখা প্রয়োজন। বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্পর্কটি  ওতোপ্রতভাবে উৎপাদনশীলতার সাথে জড়িত। তাই যে কোনো মূল্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ শক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে হবে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন আমাদেরকে নতুন সংকটের মুখোমুখি করেছে। সংগত কারণেই পরিবেশের কোনরূপ ক্ষতি সাধন না করে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। পরিবর্তিত জলবায়ূর সাথে আমাদের অফধঢ়ঃধঃরড়হ এর বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে। বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়সহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

একটি স্মার্ট স্বাস্থ্যবান জাতি তৈরীর জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে অবারিত করা প্রয়োজন। কমুউনিটি ক্লিনিককে বেইজ ধরে স্বাস্থ্যসেবা গ্রামের মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া জরুরী। একইসাথে গোটা জাতিকে ভেজালমুক্ত খাবার সরবরাহের নিশ্চয়তা দেয়া প্রয়োজন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের  মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বন্ধ নয় বরং মাদক নিয়ন্ত্রণ, ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং জনজীবনে শান্তি -শৃংখলা নিশ্চিত করার জন্যই  মোবাইলকোর্ট কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে হবে। আজ বাংলাদেশ মৎস উৎপাদনে ৪র্থ, আম উৎপাদনে ৭ম। উৎপাদনশীলতার এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের বাজেট বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, এপ্রেক্ষিতে ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করা প্রয়োজন। ভিক্ষা করা অসন্মানের। আমরা মর্যাদাবান জাতি দেখতে চাই।

নাগরিক সেবায় শুদ্ধাচার কৌশল পত্র প্রয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা সম্ভব হলে জনসেবা তথা উন্নয়ন কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় জাতীয় রাজস্ব বাজেটের প্রায় ৮৪% অর্থ কোন না কোন ভাবে প্রকৌশলীদের হাত দিয়ে ব্যয় হয়। এই অর্থ ব্যয়ে কাইজান ও শুদ্ধাচার কৌশল পত্রের সফল প্রয়োগ ঘটলে উন্নয়ন কর্মকান্ডে বিপ্লব সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলায় কোনো একটি নির্মাণ কাজে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার চরম বিতর্কের জন্ম দেয়। এসব থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। এখানে মনে রাখা দরকার সুকান্ত ভট্টাচার্যের রানার আজ নেই। রবীন্দ্রনাথের ডাক হরকরা হারিয়ে গিয়েছে। এখন জামানা বদলে পোষ্ট মাস্টার হয়েছে ব্যাংকার। একসময় টি এনড টির ফোন সেট বাসায় থাকা ছিল ক্রেডিটের ব্যাপার। আজ টি এন্ড টি প্রায় হারানোর পথে। সবার হাতেই একটি মোবাইল ফোন, কারো কারো কাছে ২/৩টি। এতে বোঝা যায়  স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে জনসেবা প্রদানের মাধ্যমেই কেবল প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে টিকে থাকা যাবে। অন্য সব পথ আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার, সরকারি কর্মচারীদের মেধা, মননশীলতা, সৃজনশীল কর্ম ও উদ্ধাবনী প্রয়াসকে উৎসাহিত করার জন্য শুধু জনপ্রশাসন পদক দিচ্ছে তাই নয়, সরকার তার সক্ষমতার ভেতর দিয়ে কর্মচারীদের জন্য বৈশাখী ভাতা চালু করেছে। তথ্যপ্রযুক্তির অভূতপূর্ব উন্নয়ন এবং গণমাধ্যমের চরম উৎকর্ষের এই যুগে নতুন বিশ্বব্যবস্থা ও ক্রমবর্ধমান জনচাহিদার নিরীখে সরকারী কর্মচারীদের দায়িত্ব বহুগুণ বেড়ে গিয়েছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে বিশ্বে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলা, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন, শিক্ষা বিস্তার, নারীর ক্ষমতায়ন, মার্তৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (গউএ) অর্জনে প্রশংসনীয় সাফল্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের সামনে রয়েছে স্বল্প সম্পদ দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠির মৌলিক চাহিদা পূরণ। ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠির কর্মসংস্থান, প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ, সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং স্বচ্ছতা ও জবাব দিহিতা নিশ্চিতকরণ হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (ঝউএ) অর্জনের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ। সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলায় গতিশীল, জনবান্ধব, দক্ষ ও যুগোপযোগী জনপ্রশাসনের কোনো বিকল্প নেই। জনসেবা প্রদান ও দেশের সার্বিক উন্নয়নে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারি কর্মচারীদের দায়িত্ব অপরিসীম।

এবার আসি ২০২০ সাল তথা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী- মুজিব বর্ষ প্রসঙ্গে। প্রজাতন্ত্রের একজন সামান্য কর্মচারী হিসাবে বিশ^াস করি বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে বাংলাদেশ হতো না আর বাংলাদেশ না হলে আমি আজ এ জায়গায় আসতে পারতাম না। তাই জাতির পিতার প্রতি আমাদের লাখো জনমের ঋণ। এই ঋণ কখনো শোধরাবার নয়। ২০২০ সাল মুজিব বর্ষ, ২০২১ সাল আমাদের স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী। এটা ধরেই নেওয়া যায় যে, আগামী দুই আড়াই বছর গোটা বাংলাদেশ উৎসবে ভাসবে। ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাহীন ২১ বছরের যে দেশ পরিচালনা তা বর্তমান প্রজন্মের একটা বড় অংশকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, জাতির পিতার জীবন ও আদর্শ সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে অন্ধকারে নিয়ে যায়। এর ফলাফলও দুর্ভাগ্যজনক। এতে করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা চরম আস্কারা পায়। বিভিন্ন সময়ে তাদের অনেকেই মন্ত্রী এমপি বনে যান। ৭৫ সাল থেকে ৯৬ সাল পর্যন্ত আরো পরে ২০০১ সাল হতে ২০০৭ সাল পর্যন্ত জাতি এটা প্রত্যক্ষ করে। এই দীর্ঘ সময়ে এ জাতির যে মানস প্রবণতা গড়ে উঠেছে তা পরিবর্তনের এখন একটা চমৎকার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দলটি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। একারণে ২০২০ সাল ও ২০২১ সালকে কাজে লাগিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী একটি মুজিবীয় প্রজন্ম সৃষ্টি করতে হবে। বর্তমান প্রজন্মের মানস প্রবণতাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনামুখী করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। ২০২০ সাল হতে ২০৪১ সাল আমাদের জাতীয় জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে আমরা বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যেতে পেরেছি; মধ্যম আয়ের দেশের কাছাকাছি চলে এসেছি। ২০৩০ এর মধ্যে এসডিজি বাস্তবায়নসহ ২০৩৫ সাল পর্যন্ত আমাদের জনশক্তি কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ সৃষ্টির যে স্বপ্ন জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে আদা-জল খেয়ে উঠে-পড়ে লাগতে হবে। ব্যক্তি জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে দূর্নীতিকে নির্মুল করতে হবে। উন্নত আইন শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণকে ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমোনোর সুযোগ দিতে হবে, বেকার যুবক-যুবতীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। লালন ফকিরের গানে আছে সময় গেলে সাধন হবে না এটা মানতে হবে। সুযোগ বার বার আসে না। ১৯৭১ সালে মহান বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতির পিতার হাত ধরে হাজার বছরের বঞ্চিত এ জাতির উপরে ওঠার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল তা ৭৫ এর ১৫ আগস্টের ট্রাজেডিতে ধুলিস্ম্যাৎ হয়ে যায়। আজ স্বাধীনতার সূর্বণজয়ন্তীর প্রাক্কালে জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে এ জাতির উপরে ওঠার যে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। ত্যাগ ও সংযমের ঝান্ডা উড্ডয়ণ করতে হবে। জাতীয়মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ জাতির মর্যাদাকে সমুন্নত রাখতে হবে। জাতির পিতার জীবন ও আদর্শকে ধারণ করতে হবে, তবেই সাফল্য আসবে।

সবশেষে আমি চীনা দার্শনিক কনফুসিয়াসের সুশাসন বিষয়ক একটি সংজ্ঞা উপস্থাপনের মাঝ দিয়ে আমার প্রবন্ধ শেষ করবো। দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, যে দেশে রাজার কাজ রাজা করে, রাজার কাজ প্রজা করেনা, আবার প্রজার কাজ প্রজা করে প্রজার কাজ রাজা করেনা- সে দেশের শাসন ব্যবস্থাকে সুশাসন বলে। আজ বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বে ক্যারিশমেটিক নেতা হিসেবে পরিচিত। তিনি জাতির সামনে  একটি উন্নত ও সম্ভাবনাময় বাংলাদেশকে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। স্বাধীনতার মূল শ্লোগান জয় বাংলাকে ডিজিটাল বাংলায় রূপান্তর করতে পারলেই কেবল সফলতা আসতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কবি আমির হামজার ভাষায়-

এবার উঠেছে ডিজিটাল বাংলার ঝড় যুগান্তরের পরে।

আবার ভাসিছে আযানের ধ্বনি শেখ হাসিনার আহবান

ক্লান্ত শ্রমিক, মাঝিরা, চাষিরা ফিরিয়া পেয়েছে প্রাণ

শত বাহু তুলি হাসিছে শাপলা বাংলার সরোবরে।

বস্তুত: স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন সুশাসন।

আর এটা করতে হবে এখনই-আজই। সবশেষে বর্জ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি

জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু – জয় ডিজিটাল বাংলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »