ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫
বাংলার মুকুটহীন সম্রাটের জন্মদিন

বাংলা সিনেমার মুকুটহীন সম্রাট অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের জন্মদিন আজ রোববার। ১৯৩১ সালের এই দিনে জামালপুর জেলার মুরুলিয়া গ্রামের মিয়াবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ‘বাংলার মুকুটহীন সম্রাট’ উপাধি পেয়েছিলেন এই অভিনেতা।

পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন আনোয়ার হোসেন। অভিনয় করেছেন পাঁচ শতাধিক সিনেমায়। হৃদয়গ্রাহী অভিনয়ে মুগ্ধ করেছিলেন দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা কোটি মানুষকে। নায়ক থেকে বাবা, দাদার চরিত্রে এসেও সমান মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন।

  স্কুল জীবনেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছিলেন আনোয়ার হোসেন। এরপর কলেজে ভর্তি হয়ে যোগ দেন নাট্যদলে। কলেজের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিয়েই ঢাকায় চলে আসেন। নিয়মিত নাটকপাড়ায় যাতায়াত শুরু করেন। অডিশন দিয়ে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়েরও সুযোগ পেয়ে যান। তবে ধীরে ধীরে তিনি মঞ্চ নাটকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ঝিনুক পত্রিকার সম্পাদক আসিরুদ্দিনের সহযোগিতায় মিনার্ভা থিয়েটার গঠন করেন। এই থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হন সৈয়দ হাসান ইমাম, ফতেহ লোহানী, মেহফুজ, সুভাষ দত্ত, চিত্রা সিনহাসহ অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব।

মঞ্চ নাটকে আনোয়ার হোসেনের দুর্দান্ত অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন পরিচালক মহিউদ্দিন। সেই সুবাদে ১৯৬১ সালে মহিউদ্দিনের ‘তোমার আমার’ সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তার অভিনয় নজর কাড়ে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।

নায়ক চরিত্রে আনোয়ার হোসেনের আত্মপ্রকাশ ঘটে ‘সুর্যস্নান’ সিনেমা দিয়ে। যেটি নির্মাণ করেছিলেন সালাহউদ্দিন। এরপরই নায়ক তথা ইতিবাচক চরিত্রে আনোয়ার হোসেন পরিচিত হয়ে ওঠেন।

আনোয়ার হোসেনকে তারকাখ্যাতি এনে দিয়েছিল ১৯৬৭ সালের সিনেমা ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা’। বাংলার শেষ নবাবের জীবন অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমা দেশের সমস্ত প্রান্তে জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সূর্যস্নান, নবাব সিরাজউদ্দৌলা, জীবন থেকে নেয়া, জয় বাংলা, অরুণোদ্বয়ের অগ্নিসাক্ষী, লাঠিয়াল, পালঙ্ক, গোলাপী এখন ট্রেনে, সুন্দরী, সখিনার যুদ্ধ, নাজমা, সূর্যগ্রহণ, সূর্যসংগ্রাম, দায়ী কে, সত্য মিথ্যা, নয়নমণি, ভাত দে, চাকর, অনন্ত ভালোবাসা ইত্যাদি।

আনোয়ার হোসেন ছিলেন প্রথম অভিনেতা, যিনি অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একুশে পদক লাভ করেছিলেন। বর্ণাঢ্য জীবনে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার এবং একবার আজীবন সম্মাননা পান তিনি। ২০১৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফেরার দেশে পাড়ি জমান খ্যাতিমান এই অভিনেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »