ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

বরুণ কান্তি মন্ডল, খুলনা বিভাগীয় ব্যুরো প্রধান।
৩ জুন ২০২৩ ইং শনিবার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাবি নৃত্যকলা বিভাগের ছাত্রী এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার মৃত্যুর ঘটনায় তার স্বামী বেকসুর খালাস পাওয়ার পরও ধোয়াশা আর কাটলই না…
আদালতের নথি সূত্রে জানা গেছে, এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার মা-বাবা হলফ নামা দিয়ে বলেছেন, ভুল বুঝাবুঝির কারণে তারা তাদের মেয়ের স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন। যা তাদের সঠিক সিদ্ধন্ত ছিল না। তাই এই মামলার আসামী বেকসুর খালাস পেলে তাদের কোন আপত্তি নেই। তাদের মেয়েকে হত্যা করা হয়নি, সে নিজেই আত্মহত্যা করেছে।


ঘটনার বিবরনে জানা গেছে… গত ১৪ ডিসেম্বর বনানীতে শ্বশুরবাড়ি থেকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় এলমা চৌধুরীকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে আনার আগেই মেয়েটির মৃত্যু হয়েছে। এলমা চৌধুরীর বাবা সাইফুল ইসলাম চৌধুরীর অভিযোগ, আসামিদের সন্দেহজনক আচরণ দেখে মেয়ের লাশ পর্যবেক্ষণ করেন। দেখেন শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন। পরে মামলা করেন। এজাহারে তিনি বলেছেন, তিন আসামি পরস্পর যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে এলমাকে আমার মেয়েকে মারধর করে হত্যা করা হয়েছে। এলমার স্বজন ও সহপাঠীদের দাবি ছিল, দ্রুত ইফতেখার ও ইফতেখারের বাবা-মাকে গ্রেফতার করে হত্যাকাণ্ডের কারণ ও জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা।
তবে মামলার শুরু থেকে চার্জশিট পর্যন্ত সমস্ত আলামতে বলা হয়েছে এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলাকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার বাবা-মায়ের ভুমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আসামী এবং বাদি উভয় পরিবারের নিকট জনরা বলেছেন, আসামী পক্ষ্যের প্রভাব এতোটাই বেশি ছিল যা এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার বাবা-মা তাদের অবস্থান থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। এলমা চৌধুরীর বাবা-মার এই ভুমিকা নিয়ে যেন ধোয়াশা কাটছে না “এলমা চৌধুরীর হত্যা আত্নহত্যা নিয়ে…..”।

ঘটনার বিবরনে আরো জানা গেছে… মামলার শুরু থেকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ইফতেখারকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। দুই দফাই তিনি নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছিলেন। ইফতেখারের দাবি (গত ১৩ ডিসেম্বর) রাতে তাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হওয়ার একপর্যায়ে এলমাকে মারধর করেন। তার দাবি ছিল, স্ত্রী মরে যেতে পারে এমন নির্যাতন তিনি করেননি।

মামলার সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা আরো বলেছিলেন, এলমার স্বামী ইফতেখার চতুর প্রকৃতির এবং অনেকটা সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি। তার পরিবারের সদস্যরা কিছুটা মারমুখী। তারা এলমাকে ‘ডমিনেট’ করে রাখতে চাইতো। এলমা প্রতিবাদ করলেই তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হতো। ইফতেখারের বাবা-মাকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালছে। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে বলে মনে করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।


এলমা চৌধুরী ওরফে মেঘলার স্বামী কানাডা প্রবাসী ইফতেখার আবেদীনের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগ এনে আদালতে চার্জশিট জমা দেয় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তবে চার্জশিটে ইফতেখারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মো. আমিন ও শ্বাশুড়ি শিরিন আমিনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। ওইদিন ইফতেখার ও তার বাবা-মা আত্মসমর্পণ করে জামিনের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেন। বাবা-মায়ের জামিন বহাল রাখলেও ইফতেখারের জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান আদালত। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) বাবা-মাকে বাদ দিয়ে শুধু ইফতেখারের বিরুদ্ধে আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে চার্জশিট দাখিল করায় অসন্তুষ্টি জানিয়েছিল বাদীপক্ষ। শ্বশুর বাড়িতে পরিকল্পিতভাবে এলমাকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি ছিল তাদের ।


এতো প্রমান, (ইফতেখারকে দুই দফা জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার, এলমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমের চিহ্ন পাওয়া,পরিবারের সদস্যরা- মা বাবার মারমুখী আচরন, এলমাকে ‘ডমিনেট’ করে রাখতে চাওয়া, লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়া, ইফতেখারের বাবা-মাকে গ্রেফতার না করা, মামলার চার্জশিট থেকে ইফতেখারের বাবা-মাকে বাদ দেয়া ও আদালত থেকে বেকসুর খালাস দেয়া )। পুলিশের এই ভুমিকা নিয়ে যেন ধোয়াশা কাটতেই চাচ্ছে না এলমা চৌধুরীর হত্যা আত্নহত্যা নিয়ে….. ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Translate »